মেধাবী শিক্ষার্থী বকুল (ছদ্মনাম) পাঁচ মাস আগে ঢাকার একটি কলেজ থেকে এমবিএ শেষ করে চাকরিতে ঢোকার বহু চেষ্টা করেছেন কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। তার সারাটা জীবন চলেছে লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই। সাত সদস্যের পরিবার ভরণ-পোষণ চলে তার একমাত্র টিউশনির টাকায়। এরই মধ্যে করোনা আতঙ্কে সবার মতো তিনিও চলে যান লকডাউনে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে টিউশনিও বন্ধ! তাই অভাবের সংসারে সঙ্কট যে আরও বেড়ে যায়।
করোনায় আক্রান্ত ঐ শিক্ষার্থী জানান, আমরা তিন বোন, মা, এক ভাই-ভাবী ও ভাতিজিসহ সাত সদস্য। পারিবারিকভাবে আমাদের আর্থিক অবস্থাও বেশি ভালো না। তাই আমি টিউশন করে চলতাম। কিন্তু দেশের এমন পরিস্থিতিতে আমার সব টিউশন বন্ধ। এখন আমার কাছে যা টাকা আছে হইতো দুই থেকে তিন দিন চলতে পারবো কিন্তু এরপর কি হবে বুঝতে পারিছি না।
বকুল নিয়মিত রক্ত ডোনেট করতেন। গত ৩ এপ্রিল একজন মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিতে চলে যান ডেল্টা হাসপাতালে। কয়েকদিন পর নিজের মধ্যে করোনার উপসর্গ বুঝতে পেরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করান। তার রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে।
ওই দিন হাসপাতালে যাওয়ার রিকশা ভাড়া ছিল না তার। পাশের বাসার একজনের কাছ থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ভাড়ার টাকা ধার নিয়েছিলেন। করোনা পজিটিভ আসায় গত শুক্রবার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
কিন্তু করোনার সঙ্গে লড়াই করা অবস্থায় পরিবারের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছেন বকুল। পরিচিত জনদের মোবাইল করে হাসপাতালের বিছানা থেকে পরিবারের জন্য সাহায্য চেয়ে কাঁদছেন তিনি।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বকুল পুরান ঢাকার নারিন্দার বাসিন্দা। তার বাবা মারা গেছেন আট বছর আগে। বড় ভাই কিছু দিন প্রবাসে ছিলেন। বিদেশে ঋণগ্রস্ত হয়ে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে বেকার হয়ে পড়েন তিনি।
এরপর থেকে অনেক কষ্টে টিউশনির টাকার উপার্জনে চলে বকুলের পরিবার। একসময় মুন্সিগঞ্জের লৌজজং উপজেলায় একসময় প্রচুর সম্পত্তি ছিল তাদের। কিন্তু নদীভাঙনে সব বিলীন হয়ে গেছে।
বকুলের বড় ভাই বলেন, সে স্বেচ্ছায় মানুষকে রক্ত দিতে ভালোবাসে। ৩ এপ্রিল ডেল্টা হাসপাতালে রক্ত দিতে গিয়েছিল বকুল। এর আগে-পরে ঘরেই ছিল। কাউকে দোষ দিচ্ছি না। তবে ধারণা করছি এখানে থেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বকুল।
তিনি আরো বলেন, আমি অনেকদিন সৌদিতে ছিলাম। সেখানে ব্যবসা দিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। পরে দেশে আসি। ৭-৮ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত আমি। দেশে এসে কাপড়ের হকারি করে যে টাকা পাই তাতে কিছুই হয় না। বকুল অনেক কষ্টে টিউশনি করে সংসার চালায়। আত্মীয়-স্বজন বড় লোক হলেও কাছে ঘেঁষতে পারি না। বোন মেধাবী তবুও একটা চাকরির ব্যবস্থাও হয়নি।
বকুলের বড় ভাই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বোন আমাদের সংসারের সব। সবকিছু বন্ধ হওয়ায় ঘরে খাবারটুকুও নেই। আমার বোন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এটাই চাই। বকুল প্রথমে মহানগর হাসপাতালে ছিল। এরপর অবস্থা অবনতি হলে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে তাকে নেয়া হয়। ওর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম, সে ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না।
বকুলের মা জানালেন, আমি সারাজীবন না খেয়ে থাকবো তবুও আল্লাহ যেন আমার মেয়েকে সুস্থ করে দেন। আমার মেয়ে আমার সব। আমার মেয়ের কারণে আমরা বেঁচে আছি। অভাবের সংসারে মেয়ে টাকা দিলে খাই, না দিলে না খেয়ে দিন কাটাই। এমন কঠিন সময়ে আমার মেয়েটা অসুস্থ হলো। সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে সবাই দোয়া করবেন।