বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি পশ্চিমবঙ্গে আত্মগোপনের গুঞ্জন, নিশ্চিত নন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত আরেক খুনি রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেম উদ্দিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতার প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। তবে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি এখনও নিশ্চিত নন। সোমবার (২০ এপ্রিল) সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ঐ পত্রিকার এক বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিনও ভারতে অবস্থান করছে। সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় মোসলেহ উদ্দিন এরইমধ্যে আটক হয়ে থাকতে পারে। আরেকটি সূত্র অবশ্য বলছে, মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের পরপরই আত্মগোপনে চলে গেছে সে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার একটি আধাশহরে ইউনানি চিকিৎসক সেজে ভাড়া ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন। সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, খুনি রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিনকে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনায় তার ডেরা থেকে আটক করা হতে পারে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় তিনি আটক হতে পারেন। তবে অন্য একটি সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে গাঢাকা দিয়েছে মোসলেহ উদ্দিন।
গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, লকডাউনের সময় ভারত থেকে মোসলেহ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে ঢাকা বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দাদের জানায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খুনিকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোনও একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও খবর, উত্তর ২৪ পরগনার একটি আধাশহরে ইউনানি চিকিৎসক সেজে ভাড়া ছিলেন মোসলেম উদ্দিন।
মোসলেহ উদ্দিনের ভারতে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট ডিক্লারেশন পেয়েছেন? আমি তো শতভাগ কনফার্ম না হয়ে কিছু বলি না। আমার কাছে পুরোপুরি নিশ্চিত কোনো খবর নেই।’ তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় মোসলেহ উদ্দিন অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বলা হয়ে থাকে তিনিই বঙ্গবন্ধুর ওপর গুলি চালিয়েছিলেন। তার অবস্থানের বিষয়ে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য না থাকলেও মনে করা হতো তিনি থাইল্যান্ডে পালিয়ে আছেন।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টার দিকে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু খুনের ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ১১ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ১২ আসামিকে ২০০৯ সালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কার্যকর হয়।
রায় কার্যকরের আগে ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।
আবদুল মাজেদ গ্রেফতার হওয়ার পর এখন পলাতক আছেন পাঁচজন। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেম উদ্দিন।

Similar Posts