লকডাউনে অসহায়দের খাওয়াতে ২৫ লাখ টাকায় জমি বিক্রি করলেন দুই ভাই

তারা দুই ভাই। নাম তাজাম্মুল পাশা ও মুজাম্মিল পাশা। বাড়ি দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের কোলার জেলায়। পেশায় ছোটখাটো ব্যবসায়ী। কলার বাগান ও রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা আছে তাঁদের। 
তাজাম্মুলের যখন পাঁচ ও মুজন্নিলের তিন বছর বয়স, তখন তাঁদের বাবা-মা মারা যান। ফলে দিদার কাছে মানুষ হয়েছেন তাঁরা।ছোটবেলায় দারিদ্রের মধ্যে বড় হয়েছিলেন তাঁরা। তাই হয়তো বোঝেন খিদের জ্বালা কী। 
দেশজুড়ে লকডাউনের মধ্যে যেসব দরিদ্র ও অসহায় মানুষ না খেয়ে রয়েছেন, তাদের অবস্থা দেখে ২৫ লাখ রুপিতে নিজেদের জমি বিক্রি করে সেসব মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তারা।
ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভি এ নিয়ে একটি অনলাইন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হচ্ছে, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে কোলার জেলার যেসব দিনমজুর ও তাদের পরিবারে না খেয়ে দিনযাপন করছেন তাদের এমন অবস্থা দেখে তারা নিজেদের জমি বিক্রি করে তাদের সাহায্য করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।
সংবাদমাধ্যমকে তাজাম্মুল জানিয়েছেন, “বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে চিকবালাপোর থেকে কোলারে দিদার বাড়িতে আসি আমরা। আমাদের টাকা-পয়সা ছিল না। সেই সময় প্রতিবেশীরা আমাদের সাহায্য করতেন। হিন্দু, মুসলিম, শিখ কোনও ধর্ম না দেখে আমাদের সাহায্য করেছেন তাঁরা। তাই আমরা বেঁচে থাকতে পেরেছি। এবার সময় হয়েছে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার। লকডাউনের ফলে শ্রমিক ও গরিব মানুষদের দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”
জানা গিয়েছে, নিজেদের জমি ২৫ লাখ টাকায় এক বন্ধুরর কাছে বিক্রি করেছেন তাঁরা। টাকা পেয়ে সেই টাকা থেকে বাড়ির বাইরে একটা তাঁবু খাটিয়ে শুরু করেছেন কমিউনিটি কিচেন। সেখান থেকে এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষদের খাবার দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে অনেককে চাল-ডাল-গমও দিয়েছেন তাঁরা। এমনকি মাস্ক ও স্যানিটাইজারও দিয়েছেন এলাকার লোকেদের।
এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষকে তাঁরা খাইয়েছেন। যতদিন না সমস্যার সমাধান হচ্ছে এই কাজ তাঁরা করবেন বলে জানিয়েছেন। এই কাজে অনেকেই তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। লকডাউনে যাতে রাস্তায় বেশি মানুষ বের না হন, তার জন্য কমিউনিটি কিচেনে রান্না করে বাড়ি বাড়ি সেই খাবার দিয়ে আসেন এই ভলেন্টিয়াররা। কোলার প্রশাসনের তরফে তাঁদেরকে পাস দেওয়া হয়েছে যাতায়াত করার।
জমি বিক্রি করলেও এখনও তার মালিকানা অবশ্য পাননি ওই বন্ধু। একটা বন্ড সই করে আপাতত জমি বিক্রি করা হয়েছে। লকডাউন উঠলেই বাকি কাজকর্ম হয়ে যাবে। এই সময়ে এই মহান দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নেওয়ায় পাশা ভাইদের ধন্যবাদ জানিয়েছে কোলার প্রশাসন। তাঁদের তরফে আবেদন করা হয়েছে, যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা যদি এভাবেই এগিয়ে আসেন, তাহলে সরকারের কাজে অনেক সুবিধা হয়। সেইসঙ্গে এই কঠিন পরিস্থিতিতে গরিব ও অসহায় মানুষদের খাবারের কোনো সমস্যা হয় না।
প্রসঙ্গত, ভারতে গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন চলছে, যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩ মে। তবে এটা আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে দেশটিতে প্রায় ২৫ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ৭৭৫ জন মারা গেছে। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে কোটি কোটি দিনমজুর ও গরিব মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *