ভারতে একজন ধর্ষিতার ফরেনসিক টেষ্ট বা ডাক্তারি পরীক্ষা কিভাবে হয় | লজ্জাকর তথ্য দেখুন ভিডিও সহ


অনলাইন ডেস্ক :: প্রতি ২২ মিনিটে ভারতের কোথাও না কোথাও একটি মেয়েকে যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে৷ বাংলাদেশসহ প্রায় সারা বিশ্বেই বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা, তাও আবার অত্যন্ত দ্রুত গতিতে৷ 

আশ্চর্যের বিষয়, পশ্চিমা বিশ্বে, যেমন জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷ আর ধর্ষিতাকে এর বিচার পেতে দরকার হয় ফরেনসিক টেস্ট কিংবা ডাক্তারি পরীক্ষা।

শুধু আমাদের দেশ নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ক্ষেত্র বিশেষ ধর্ষণের চেয়েও কষ্টকর ঘটনা ঘটে ধর্ষিতা বা ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা করার সময়। 

তবে ভারতে কোথাও কোনো মেয়ে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে যদি পুলিশের দ্বারস্থ হন, তখন সত্যি-সত্যিই তিনি ধর্ষিতা হয়েছেন কি না তা জানার জন্য চলে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষাসহ কিছু টেস্ট।

তবে ধর্ষিতা নারী যখন আক্রান্ত হয়, তখন সে প্রবলভাবে বাধা দেয়। দাঁতে নখে লড়াই করে। ধর্ষণকারীও বা ধর্ষকরা প্রবল শক্তি প্রয়োগ করে। এর ফলে ভিকটিম আহত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ধর্ষিতার তার সারা শরীরেই ইনজুরি থাকবে। তার নখে ধর্ষণকারীর শরীর চামড়া মাংস লেগে থাকবে, গায়ে কামড় বা লালাল দাগ থাকবে, এসব কিছু ফরেনসিক টেস্টের একটা বড় হাতিয়ার।

তবে সেই পরীক্ষার সময়ে যে ধরনের লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে ধর্ষিতা মেয়েটিকে, কখনও কখনও তা হয় তাঁর মূল লাঞ্ছনার ঘটনার চেয়েও বেশি লজ্জাজনক। কিন্তু আদতে টেষ্টের পুরো প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিটি যে প্রায় আক্ষরিক অর্থেই দ্বিতীয় বারের একজন নারীর জন্য মানসিক ও শারিরীক যৌন নির্যাতন বটে। কীভাবে হয় একজন ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা কিংবা ফরেনসিক টেষ্ট কিভাবে করা হয়? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর কতজন সাধারন মানুষ জানেন?  

সম্প্রতি ভারতের ডাক্তার কে এস নারায়ণ রেড্ডি, ডাক্তার ও পি মূর্তি তাঁদের ‘দা এসেন্সিয়ালস অফ ফরেনসিক মেডিসিন এন্ড টক্সিকোলজি’ বইতে জানিয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তর।

বইটিতে ধর্ষণোত্তর ডাক্তারি পরীক্ষার যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তা রীতিমতো গা শিউরে উঠার মতো। তার কয়েকটি বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:

১. এ পরীক্ষায় সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় আল্ট্রভায়োলেট আলোর সাহায্যে ওই মেয়েটির সারা শরীরে পরীক্ষা করে দেখা হয় কোথাও কোনো অংশে বীর্যের কোনও চিহ্ন রয়েছে কি না।

২. ডাক্তারি পরীক্ষার সময়ে একটি একটি করে ওই ধর্ষিতার সমস্ত পোশাক খুলে নিয়ে নগ্ন গতে হয় একজন ডাক্তারের উপস্থিতিতে। একটি কাগজের টুকরোর উপরে দাঁড়িয়ে এই কাজ করতে হয়, যাতে পোশাক খোলার সময়ে মেয়েটির শরীর থেকে নীচে খসে পড়া যে কোনো আলামত যদি পাওয়া যায় তার সবকিছু যেনো ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা যায়।

৩. মেয়েটির শরীরে তৈরি হওয়া কোনো কাটা, ছেঁড়া বা ছাল উঠে যাওয়ার মতো ক্ষতস্থান যেগুলি ধস্তাধস্তির ফলে তৈরি হতে পারে, সেগুলিকে গভীরভাবে খুঁটিয়ে দেখে পরীক্ষা করা হয়।

৪. মেয়েটির শরীরের কোনো অংশে কতটা চাপ পড়েছে তার উপর নির্ভর করে কী ধরনের ক্ষত তৈরি হবে সেই অংশে। যদি মেয়েটির পিঠে বা কোমরে ছেঁড়ে যাওয়ার দাগ থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, মেয়েটিকে কোনো পাথুরে বা শক্ত জমির উপর ফেলে নির্যাতন চালানো হয়েছে। এতে স্তনবৃন্তে কামড় বা অন্য কোনও আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যেতে পারে।



৫. মেয়েটির যৌন কেশ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়, সেখানে কোনো পুরুষের যৌন কেশ কিংবা ধুলোবালি ইত্যাদি লেগে রয়েছে কিনা। ধর্ষিতা জীবিত হোক বা মৃত, তার অন্তত ১৫-২০ টি যৌন কেশ সংগ্রহ করা হয় ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য। 



৬. আর মেয়েটির মাথার চুলও সংগ্রহ করা হয় পরীক্ষার জন্য।

৭. ধর্ষিতার যৌন কেশ কিংবা যৌনির আশেপাশে বীর্যের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় কিনা তা খুঁটিয়ে দেখা হয়। পাতলা তুলোর সাহায্যে মেয়েটির যৌনিরস সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য। এতে খুঁটিয়ে দেখা হয় মেয়েটির সতীচ্ছদের অবস্থাও।



৮. যদি অপরাধ ঘটে থাকে ৪৮ ঘন্টা কিংবা তারও বেশি সময় আগে, তাহলে একটি কাচের রড, তুলো কিংবা স্প্যাটুলার সাহায্যে যৌনির ভিতর থেকে সংগ্রহ করা হয় যৌনিরস। দেখা হয়, তাতে বীর্য কিংবা রক্তের কোনো নমুনা মিলছে কি না।



৯. শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত অংশগুলি, বিশেষত যৌন অঙ্গের ক্লোজ আপ ছবিও তুলে নেওয়া হয়।

১০. সাধারণত লাঞ্ছিতার এক তৃতীয়াংশ শরীরেই এই ধরনের কোনো ধস্তাধস্তির চিহ্ন দৃশ্যমান হয় না, কারণ ধর্ষণের সময়ে মেয়েরা ভয়ের চোটে সাধারণত আক্রমণকারী খুব একটা বাধা দেয় না। বিশেষত মেয়েটির মাথায় যদি আঘাত করা হয়, কিংবা গলা চেপে ধরা হয়, তাহলে তার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এবং সাহস কমে যায় অনেকটাই। সেসব ক্ষেত্রে তার শরীরের অন্যান্য অংশে তেমন কোনো গুরুতর আঘাতের চিহ্ন আর থাকে না।

১১. ধর্ষিতার স্তন ঝুলে পড়েছে কিনা সেটাও নাকি পরীক্ষা করা হয়।

তবে ভারত এমন একটি দেশ, যেখানে যত ধর্ষণের ঘটনা পুলিশের খাতায় ওঠে, তার চেয়ে অনেক বেশি কেস পুলিশের অগোচরেই থেকে যায়।

তার একটা অন্যতম কারণ হল, পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরে অকল্পনীয় হেনস্থার শিকার হতে হয় অধিকাংশ ধর্ষিতা মেয়েকে।

তবে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না ঠিকই, কিন্তু সেই প্রক্রিয়া কি আর একটু মানবিক হতে পারে না? আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতা একটু কমিয়ে ধর্ষিতা ওই মেয়েটিকে সুবিচার দেওয়ার বিষয়টি কি করে তোলা যায় না দ্রুততর? এমনই প্রশ্ন উঠেছে দেশজুড়ে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *