যেসব শর্তে মুসল্লিদের মসজিদে নামাজ আদায় করতে হবে


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মসজিদে মুসল্লিদের প্রবেশের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৃহস্পতিবার (৭ মে) জোহরের নামাজ থেকে সুস্থ মুসল্লিরা মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবেন। বুধবার (৬ মে) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

এতে দেশের সব মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুম্মা এবং তারাবির নামাজসহ সব ধরণের নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র সুস্থ নামাজিরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করতে পারবেন।  

তিনি বলেন, ‘আগামীকাল জোহরের নামাজের পর থেকে সারাদেশের মসজিদে মুসল্লিরা নামাজ পড়ার সুযোগ পাবেন। তবে মসজিদে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলি থাকবে। এসব শর্তাবলির কথা সারাদেশের মসজিদ পরিচালনা কমিটিকে জানিয়ে দেয়া হবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশে জনসমাগমের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমা ও তারাবির জামাত সীমিত আকারে আদায়ের জন্য নির্দেশনা জারি করেছিল। দেশের শীর্ষ আলেম-ওলামাগণ পবিত্র রমজানের গুরুত্ব বিবেচনা করে মসজিদে নামাজ আদায়ের শর্ত শিথিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে সম্প্রতি সরকার সার্বিক বিবেচনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা (স্বাস্থ্যবিধি) মেনে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে কাল বৃহস্পতিবার জোহর থেকে সুস্থ মুসল্লিদের মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছু শর্তে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেওয়া হলো।’
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে নিম্নলিখিত শর্ত সাপেক্ষে মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য বলা হয়েছে :
১। মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে সম্পর্ক মসজিদ জীবানুনাশক দ্বারা পরিস্কার করতে হবে, মুসল্লীগণ প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
২। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান পানি রাখতে হবে এবং আগত মুসল্লীকে অবশ্যই মাস্ক পড়ে মসজিদে আসতে হবে।
৩. মুসল্লিদের বাসা থেকে ওজু করে ও সুন্নত নামাজ ঘরে আদায় করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৪. নামাজের কাতারে তিন ফুট পর পর দাঁড়াতে হবে।
৫.এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
৬. শিশু, বৃদ্ধ, যে কোনও ধরনের অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি জামাতে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না।
৭. মসজিদের ওজুখানায় সাবান বা স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদের সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৮. সর্ব সাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
৯. মসজিদে ইফতার ও সেহরির আয়োজন করা যাবে না।
১০. উল্লেখিত শর্ত পালন করে প্রত্যেক মসজিদে সর্বোচ্চ পাঁচ জন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ইতেকাফের জন্য অবস্থান করতে পারবেন।
১১. করোনা থেকে রক্ষা পাবার জন্য মসজিদে নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে দোয়া করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
১২. খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘এসব নির্দেশনা লংঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃখলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।’
এর আগে ৬ এপ্রিল মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। সে সময় নির্দেশ দেওয়া হয়, শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। জুমার জামাতে অংশগ্রহণের পরিবর্তে ঘরে জোহরের নামাজ আদায়ের নির্দেশ হয়। মসজিদে জামাত চালু রাখার প্রয়োজনে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ অনধিক পাঁচ জন এবং জুমার জামাতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন। বাইরের মুসল্লি মসজিদে জামাতে অংশ নিতে পারবেন না।
এরপর ২৪ এপ্রিল পৃথক আরেক বিজ্ঞপ্তিতে তারাবি নামাজের বিষয়ে বিধি নিষেধ আরোপ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বলা হয়, খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদিম ও দুই জন হাফেজসহ সর্বোচ্চ ১২ জন রমজান মাসে মসজিদে এশা ও তারাবি’র নামাজে অংশ নিতে পারবেন।
জানা গেছে, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী ১০ মে থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের পরপরই মসজিদগুলোতে নামাজ পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সারাদেশের মুসল্লিদের দাবি ওঠে। এজন্য দেশের শীর্ষ আলেম ওলামারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানান। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ধর্ম মন্ত্রণালয় বিশেষ শর্তসাপেক্ষে আগামীকাল থেকে মুসল্লিদের মসজিদে নামাজ আদায়ের অনুমতি প্রদান করতে যাচ্ছে।’

Similar Posts