লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:: বৃদ্ধ বাবা আফতাব উদ্দিন (৯০) রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম করপাড়া বড় বাড়ীতে বসবাস করেন। বর্তমানে তিনি অন্ধ অবস্থায় ঘরে শয্যাশায়ী।
তিনি পূর্বে দীর্ঘ ৪২ বছর সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন রামগঞ্জ উপজেলার কচুয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায়। অথচ একটা সময় শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতেন মানুষের জীবন। শিক্ষার আলো জ্বালানো এ মানুষটি এখন অবহেলার শিকার। শুধু তা-ই নয়, শিকার চরম নিষ্ঠুরতার। তার ভর দেয়া লাঠি দিয়েই একের পর এক আঘাত করা হয়েছে তাকে। সম্পত্তির লোভে আপন সবচেয়ে ছোট ছেলের বড় জন বদরোদ্দৌজা তাকে মেরে রক্তাক্ত করেছেন তাকে। বৃহস্পতিবার (৭ মে) ভোরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে পৌর শহরের কাঠবাজার সড়কের একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
৯ ছেলের মধ্যে ৪ ছেলে ঢাকা ও প্রবাসে। সবচেয়ে ছোট ছেলের বড় জন বদরোদ্দৌজা (৩২)। রামগঞ্জ পাটবাজার দারুস সালাম জামে মসজিদের ইমামতি করেন। তিনি বাসা নিয়ে থাকেন রামগঞ্জ কাটবাজার সড়কের একটি ভবনে।
আহত বৃদ্ধ বাবা আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘ফজরের নামাজের পর বাড়ির সম্পত্তি তার নামে লিখে দেয়ার কথা বলে আমার ছেলে বদরোদ্দৌজা। এ বিষয়ে আমি অন্য ছেলেদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলার সাথে সাথে আমার হাতের লাঠি দিয়ে আমাকে মারধর করে। এ সময় অনেক অনুনয় বিনয় করেও রক্ষা পাইনি। আজ আমি ও আমার স্ত্রী সাহরী না করেই রোজা রেখেছি। মারধরের সময় আশেপাশের বাসার লোকজন এগিয়ে আসলে আমার ছেলে বদরোদ্দৌজা তাদেরকেও মারা জন্য তেড়ে যায়।’
জানাগেছে, মারধরের পর আহত আফতাব উদ্দিনকে স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বদরোদ্দৌজা মসজিদ কমিটির লোকজন তার নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় দিয়ে স্থানীয়দের ভয় দেখায়।
এদিকে ঘটনার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রামগঞ্জ পাটবাজার দারুস সালাম জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি শহিদ উল্যা ও তার ছেলে বাবলু ইমাম বদরোদ্দৌজাকে মানসিক বিকারগ্রস্থ বলছেন। কিন্তু কেনো একজন মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তিকে মসজিদের ইমাম নিয়োগ করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার হারুন অর-রশিদ ওরফে চাঁদা হারুন বলেন, আমরা আগে বুঝতে পারিনি। আমরা রেজুলেশন করেছি তাকে দারুস সালাম জামে মসজিদের ইমামতি থেকে বাদ দেয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় লোকজন জানায়, ‘বদরোদ্দৌজা গত কয়েকবছরে চারটি বিয়ে করেছেন। স্ত্রীদের মারধর করায় সব স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। বর্তমানে তিনি রামগঞ্জ কাঠ বাজারের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন।’
এ ব্যপারে বৃদ্ধ বাবা আফতাব উদ্দিনের সবচেয়ে ছোট ছেলের বড় জন ইমাম বদরোদ্দৌজা বলেন, ‘তারা (মা-বাবা) আমার হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দিচ্ছে না। আমি তাদেরকে খাওয়াচ্ছি। আমার মা রান্নায় তেল বেশি খরছ করে। তবে বাবাকে মারধরের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বদরোদ্দৌজা।’
জানতে চাইলে রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে বৃদ্ধ মানুষটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। তার চিকিৎসা নিশ্চিত করা দরকার। তারপরে অভিযোগ পেলে ছেলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’